স্কাই বাংলা, বাঁকুড়া: মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ। কিন্তু সেই পথ পাকা করার চিন্তাতো দুরস্ত এক ট্রাক্টর মোরাম দেওয়ার কথাও ভাবেনি কেউ। আলপথে স্থানে স্থানে জমে রয়েছে হাঁটু সমান কাদা-জল। ঝোপঝাড়ে ঢাকা আলপথে পদে পদে বিষধর সাপের উপদ্রব। কিন্তু তার থেকেও বড় বালাই লেখাপড়ার চাহিদা। অগত্যা প্রাণ হাতে করেই দৈনন্দিন স্কুলে যাতায়াত করতে বাধ্য হয় ৩ টি গ্রামের পড়ুয়ারা। স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। আতঙ্কে থাকে স্কুল কর্তৃপক্ষও। কিন্তু সেই আতঙ্কে কার কী যায় আসে?
|
খাল পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা, নিজস্ব চিত্র |
বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের নূতনগ্রাম, হলাইগড়িয়া, বাগরাকোন্দা গ্রাম। এই তিনটি গ্রামের সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা শতাধিক। স্থানীয় এলাকায় হাই স্কুল বলতে গ্রামগুলি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিহারজুড়িয়া হাইস্কুল। স্কুলে যাবার দুটি রাস্তা, একটি ৬ থেকে ৮ কিলোমিটার ঘুরে মুখ্য রাস্তা ধরে ,আর একটি চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়কে উপেক্ষা করে আলপথে কাদাজল, ঝোপঝাড় পেরিয়ে। আলপথ ধরে গেলে দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। প্রায় দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন পড়ুয়ারা। এই দেড় কিলোমিটার পথই কার্যত দুর্গম ছোট ছোট পড়ুয়াদের কাছে। আলপথের জায়গায় জায়গায় জমে রয়েছে হাঁটু সমান জল কাদা। বর্ষায় সেই রাস্তার পুরোটাই ঢাকা থাকে জল আর কাদায়। সারা বছরই হাতে চটি জুতো নিয়ে গ্রাম থেকে স্কুল যেতে হয় পড়ুয়াদের। আলপথের বেশিরভাগটাই ঝোপঝাড়ে ঢাকা থাকে বছরভর। যে ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে মৃত্যুদূত বিষধর সাপ ও পোকা মাকড়। কিন্তু সে পথ মাড়াতে না চাইলে ৬ কিলোমিটার ঘুরপথে যে পৌঁছাতে হবে স্কুলে। অগত্যা দেড় কিলোমিটার দূর্গম আলপথই ভরসা এলাকার পড়ুয়াদের। স্কুলে পাঠিয়ে চূড়ান্ত আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা। যাতায়াতের পথে পড়ুয়াদের বিপদের আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে থাকে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তা তৈরী হয়েছে। পথশ্রী প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপণের বড় বড় হোর্ডিং। কিন্তু পথশ্রী প্রকল্পে পাকা রাস্তা তো দুরস্ত, দূর্গম এই আলপথে সামান্য মোরাম দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি প্রশাসন। রাস্তার এমন হাল অজানা নয় প্রশাসনের। স্থানীয়দের দাবী বারংবার প্রশাসনকে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু হাল ফেরেনি রাস্তার। বিজেপির দাবী পথশ্রী প্রকল্পের বিজ্ঞাপনই সার। রাজ্যের রাস্তার হাল বহু ক্ষেত্রে এমনই। রাজ্যের শাসক দল ও সরকারের মুখের কথা এক আর বাস্তব চিত্র আরেক এই ঘটনা তারই প্রমাণ। তৃনমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধীদের দাবী উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবী একদিকে জমির অভাব অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কোনো আবেদন জমা না পড়াতেই ওই রাস্তা করা সম্ভব হয়নি। আবেদন জমা পড়লেই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।
|
মেঠো পথে স্কুলে যাচ্ছে পড়ুয়ারা, নিজস্ব চিত্র |
তবে এরপর আদৌ কী ফিরবে ওই রাস্তার হাল? নাকি রাজ্যের আর পাঁচটা প্রকল্পের মতো এক্ষেত্রেও শাসক বিরোধী দড়ি টানাটানিতে বছরের পর বছর দূর্ভোগের শিকার হবে ক্ষুদে পড়ুয়ারা? উত্তরটা অজানা সকলের কাছেই।