স্কাই বাংলা, বাঁকুড়া: নিজের স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে বাড়িতে পুঁতে প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় মৃতার স্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিল বাঁকুড়া জেলা দায়রা আদালত। ২০১৫ সালের অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় মৃতার স্বামী মুলুকচাঁদ সেনকে গত শনিবার দোষী সাব্যস্ত করে জেলা দায়রা আদালত। এরপর সোমবার মুলুক চাঁদ সেনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।
২০১৫ সালে এক গৃহবধূ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়ায় বাঁকুড়া ও পুর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড় এলাকায়। জানা যায় বাঁকুড়ার আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা পুজা বাউরীর সঙ্গে ২০১৫ সালে বিয়ে হয় পুর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় এলাকার বেলনা গ্রামের বাসিন্দা মুলুকচাঁদ সেনের। বিয়ের পর থেকেই ওই গৃহবধূর উপর নির্যাতন শুরু হয় বলে অভিযোগ। ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল হঠাৎই শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূ নিখোঁজ হয়ে যান। স্বামী মুলুকচাঁদ দাবী করেন বাপের বাড়ি যাওয়ার নাম করে পুজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি। সন্দেহ হওয়ায় পুজার বাপের বাড়ির লোকজন ওই বছরেরই ১৪ এপ্রিল বাঁকুড়া মহিলা থানায় স্বামী মুলুকচাঁদ সেন, শ্বশুর পীরু সেন ও শাশুড়ি শ্যামলী সেনের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করে। অভিযুক্ত স্বামী গা ঢাকা দেওয়ায় প্রথমে গ্রেফতার করা হয় শ্বশুর ও শাশুড়িকে। পরে ২০১৭ সালের ২৭ আগষ্ট অভিযুক্ত স্বামী মুলুকচাঁদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মুলুকচাঁদ স্বীকার করে স্ত্রীকে খুন করে পুঁতে দেওয়ার কথা। এরপর গত ৭ সেপ্টেম্বর বেলনা গ্রামে মদন সর্দার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়ি ভেঙে আশিটি হাড় ও একটি মাথার খুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নোয়া পোলা দেখে হাড়গুলি পুজা বাউরীর বলে চিহ্নিত করে পুজা বাউরীর বোন লক্ষ্মী বাউরী। পরে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়।
এরপরই ওই মামলায় খুনের মামলা যুক্ত করে ২৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চার্জ গঠন করে আদালত। এই ঘটনায় মোট ৩৪ জনের সাক্ষ্য সংগ্রহ করে আদালত। বিচার চলাকালীন অভিযুক্ত শ্বশুর পিরু সেন এর মৃত্যু হয়। শাশুড়ি শ্যামলী সেনকে প্রমাণাভাবে মুক্তি দেয় আদালত। গত শনিবার অভিযুক্ত স্বামী মুলুকচাঁদ সেনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বাঁকুড়া জেলা দায়রা বিচারক মনোজিৎ ভট্টাচার্য। সোমবার মুলুকচাঁদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামীদিনে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানোর কথা জানিয়েছে অভিযুক্ত মুলুকচাঁদ সেন।
