২০২২ সালের ২ মে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখে মেসে ফিরেছিলেন বহরমপুরের কলেজছাত্রী সুতপা চৌধুরী। তার পরেই তাঁকে মেস থেকে বাইরে ডাকে, প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরী। প্রথমে গুলি, তারপর ধারালো অস্ত্রের কোপ। ৪২ বার। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন সুতপাকে।
সুশান্তকে গ্রেফতার করে তদন্ত যত এগোয় ততই উঠে আসে একের পর এক চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায় বহরমপুর আদালতে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। তার পরে ১৫ মাস ধরে বিচার শেষে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয় সুশান্ত। বৃহস্পতিবার তার ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে বহরমপুর আদালত।
জানা যায়, বহুদিন ধরেই পরিচয় সুশান্ত আর সুতপার। এর পরে মালদহের গৌড় কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র ছিল সুশান্ত। সে সময় পড়াশোনা করার জন্য পিসির বাড়িতে থাকত সে। তার পাশাপাশিই বাড়ি সুতপার। সেই সময় থেকেই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রায় বছর পাঁচেক মালদহের ইংরেজবাজারে প্রেমও করে তারা। কিন্তু সুতপার এই সম্পর্কের কথা পরিবার জেনে যেতেই শুরু হয় অশান্তি। পরিবারের তরফে বারণ করা হয় মেয়েকে,, বলা হয় এই সম্পর্ক মেনে নেওয়া হবে না ।শুধু তাই নয়, মালদহে সুতপা-সুশান্তের সম্পর্ক নিয়ে একটি সালিশি সভা বসানো হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর ও অন্যান্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সুশান্তকে বলা হয়েছিল তার ল্যাপটপ থেকে সুতপার ছবি মুছে দিতে। সে ল্যাপটপে নাকি ভর্তি ছিল যুগলের ঘনিষ্ঠ ছবি। আর সেই ছবি দেখিয়েই মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করা হত বলেও অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের লোকজন। সব ছবি মুছে দেওয়া হয়েছিল ওই সালিশি সভায়।
অন্যদিকে, মোহ কাটতে শুরু করে সুতপারও। তাঁকে পড়াশোনার জন্য মালদহ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বহরমপুরে। সেখানকারই গার্লস কলেজে বটানি নিয়ে পড়তেন তিনি। কাত্যায়নীর গলিতে একটি মেসে থাকতেন। সেখানে এসে প্রকাশ্যেই সুতপাকে খুন করে সুশান্ত, তাঁর এককালের প্রেমিক। তদন্তে উঠে আসে, এতদিনের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার আক্রোশ থেকেই এই নৃশংস খুন।