মলয় সিংহ, বাঁকুড়া: নিমেষের মধ্যে হবে তথ্য আদান-প্রদান, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অ্যান্টেনা আবিষ্কার করে তাক লাগালেন বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী শ্রীকান্ত পাল। বর্তমানে অ্যান্টেনা বলতে সাধারণত আমরা বুঝে থাকি বাড়ির ছাদে বড় মুখ করা বা সোজা সেঁটে থাকা একটি বস্তু। কিন্তু অ্যান্টেনা যে আঙ্গুলের একটা ঘাটের থেকেও কম হতে পারে তা প্রমাণ করে দেখালেন বাঁকুড়ার এক বিজ্ঞানী। বাঁকুড়া পৌরশহরের কেন্দুয়াডিহি এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত পাল, পেশায় রাঁচির মেসরার বিড়লা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষনার সাথে যুক্ত, এর আগে তিনি দিল্লী এবং রুরকি আইআইটিতে অধ্যাপনার কাজ করেছেন। বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলিজিয়েট স্কুল থেকে, তারপর ওয়ারেঙ্গল আর.ই থেকে স্নাতকের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর,তারপর সোজা পাড়ি অক্সফোর্ডে। আজ থেকে দুই দশক আগে ব্লুটুথ আবিষ্কারের ফলে,তথ্য আদান-প্রদানে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল,এইবার বাঁকুড়ার বিজ্ঞানী শ্রীকান্ত পালের বানানো অ্যান্টেনা দিয়ে তার থেকেও কম সময়ে তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব বলেই জানালেন তিনি। বিখ্যাত আমেরিকান সংস্থা এই বোতাম অ্যান্টেনাকে বিশ্বের এখনো পর্যন্ত সবচাইতে ছোটো অ্যান্টেনা বলে ঘোষনা করেছে।
১৪ মিলিমিটার লম্বা এবং ১১ মিলিমিটার চওড়া এই ক্ষুদ্রতম এন্টেনা,যার ফ্রিকোয়েন্সী ১.৮ গিগাহার্জ থেকে ১৮ গিগাহার্জ পর্যন্ত।বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এই এন্টেনার ব্র্যান্ডউইথ ১০ অনুপাতের ১ ব্র্যান্ডউইথ। তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে যে কোন স্মার্ট ফোন বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশে ব্যাবহার করা সম্ভব। ২০১৩ সালে এই অ্যান্টেনাটি তৈরির পর পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেই যৌথভাবে পেটেন্ট পেয়েছেন রাঁচির বিড়লা ইইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক শ্রীকান্ত পাল এবং তার সহযোগী, তৎকালীন শ্রীকান্ত বাবুর তত্বাবধানে পিএইচডি করা ছাত্র মৃন্ময় চক্রবর্তী।ব্লুটুথের পর এই বোতাম অ্যান্টেনা তথ্য আদান-প্রদানের নব দিগন্ত খুলে দেবে বলে জানান শ্রীকান্ত বাবু।ব্লুটুথ এর তুলনায় এর তথ্য আদান প্রদানের ক্ষমতা একশো গুণ বেশি দাবি বিজ্ঞানী শ্রীকান্ত বাবুর।
শুধু যে এই বোতাম অ্যান্টেনা আবিষ্কার তা নয়,এরপূর্বে তিনি নাসার গ্রীন ব্যান্ড টেলিস্কোপ এর সংকেত সংগ্রহ সংক্রান্ত সমস্যাটিরও সমাধান করেছেন। আরো অনেক টেলিস্কোপের সংকেত সংক্রান্ত সমস্যাও দূর করেছেন।শ্রীকান্ত বাবুর এই অভূতপূর্ব সাফল্য বেজায় খুশী তার পরিবার। তিনি যে বাঁকুড়া বাসসির গর্ব তা প্রমাণ করে দেখালেন।
শ্রীকান্তবাবু জানান যে,২০১৩ সালে তাঁর সহযোগী মৃন্ময় চক্রবর্তীকে নিয়ে এই অ্যান্টেনা তৈরি করেন তিনি। বিড়লা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষণাগারে চলে সামগ্রিক কাজ। সে সময় অ্যান্টেনার পেটেন্টের জন্য আবেদন জানানো হয়। শ্রীকান্তবাবুর তৈরি এই অ্যান্টেনার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু হলে আগামীদিনে পৃথিবী থেকে মুছে যাবে ব্লুটুথ প্রযুক্তি। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা ও বহুজাতিক সংস্থা আমাকে বানিজ্যিক ভাবে এই অ্যান্টেনা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি এখনও কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। সম্প্রতি, ভারত সরকার এই অ্যান্টেনার পেটেন্ট প্রদান দিয়েছে।
শ্রীকান্তবাবুর মনে করেন তার এই আবিস্কৃত এই অ্যান্টেনা আগামী দিনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে।